আমাদের জীবনটা তো শুধু ক্লাসরুম আর বইখাতা না, তাই না? জীবনের রাস্তাটা অনেক বড়, আর এখানে অনেক বাঁক আছে… যেগুলো সম্পর্কে কেউ আমাদের আগে থেকে বলে না।
একদম ছোট্টবেলা থেকে যখন তোমরা (audience who are young) ধীরে ধীরে বড় হচ্ছো, তখন আমি চাই তোমরা কিছু মৌলিক জিনিস জেনে রাখো। এগুলো হয়তো শুনতে “Brutal” বা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোই হলো জীবনের সেইসব Lesson যা শেখা থাকলে অনেক অপ্রস্তুত পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়ে যায়।
আজ এমন ১১ টা Life Lesson নিয়ে কথা বলবো, যা হয়তো আপনাকে কেউ বলেনি কিন্তু আপনার জানা দরকার। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এগুলো শুধু আপনাদের মতো তরুণদের জন্যই না, বড়দের জন্যও সমানভাবে জরুরি। একটু সময় নিয়ে পড়বেন কিন্তু… দেখবেন অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে!
১. Life is unfair.
এটা মেনে নেওয়াটা জরুরি। দুনিয়াটা সবসময় আপনার পক্ষে থাকবে না। সবাই সমান সুযোগ পাবে না, সবার একই রকম সুবিধা থাকবে না।
যেমন ধরুন, ক্লাসের পরীক্ষায় হয়তো আপনি অনেক খেটেছেন, কিন্তু আপনার বন্ধু কম খেটেও ভালো রেজাল্ট করে ফেলল। অথবা খেলার মাঠে, আপনার দল ভালো খেলেও জিততে পারলো না।
এটা হতেই পারে।
যখনই আপনি এই বাস্তবতাটা মেনে নেবেন, তখন দেখবেন হতাশ না হয়ে আপনি আরও বেশি স্বাধীনতা অনুভব করবেন আপনার Goal গুলো পূরণ করার জন্য।
কারণ তখন আপনি বুঝবেন, আপনার নিজের চেষ্টাটাই আসল, বাইরের কোনো সুবিধার ওপর ভরসা করে থাকা চলবে না।
২. স্বাধীনতা মানে আসলে কি?
আমরা সবাই Freedom চাই, তাই না? অনেকে মনে করে, অনেক টাকা থাকলেই বুঝি Freedom আসে।
কিন্তু আসলে কি তাই?
নাহ!
True Freedom মানে কিন্তু শুধু টাকা থাকা না।
True Freedom হলো, আপনি আপনার সময়টা কীভাবে কাটাবেন, হাতে যা আছে সেটা কিভাবে খরচ করবেন – সেই সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়ার ক্ষমতা।
ধরুন, আপনার হাতে অনেক টাকা আছে, কিন্তু আপনি কোনোভাবেই নিজের ইচ্ছেমতো ১০ মিনিটও কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন না… তাহলে সেটাকে কি Freedom বলা যায়?
বরং, আপনি হয়তো কম টাকায় চলছেন, কিন্তু নিজের Hobby এর পেছনে সময় দিতে পারছেন, বই পড়তে পারছেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারছেন… এটাই আসল Freedom।
টাকার সাথে এর সম্পর্কটা খুব হালকা।
৩. নিজে থেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন তো মরবেন!
আপনি হয়তো অনেক Talented, অনেক পরিশ্রমী।
ক্লাসে ভালো করেন, খেলাধুলায়ও হয়তো বেশ এগিয়ে।
কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখবেন, কেউ আপনাকে এসে হাতে ধরে সুযোগ দেবে না।
সুযোগগুলো তৈরি করে নিতে হয়, অথবা খুঁজে নিতে হয়।
আপনি হয়তো মনে মনে ভাবছেন, “আমি এত ভালো ছাত্র, স্যার কেন আমাকে Science Fair-এ চান্স দিলেন না?” বা “আমি এত ভালো খেলি, কোচ কেন আমাকে দলে নিচ্ছেন না?”
… আসলে সুযোগের জন্য আপনাকে নিজের Value প্রমাণ করতে হবে, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজে থেকে এপ্রোচ করতে হবে অনেক সময়। নিজে থেকেই অনেক সময় সবাইকে দেখাতে হবে পাবলিকলি যে আপনি আসলে কতোটা ভালো এবং কি কি পারেন!
কেউ আপনার জন্য পথ তৈরি করে বসে থাকবে না।
৪. ব্যাস্ত থাকা মানেই প্রোডাক্টিভ হওয়া না!
আমরা অনেক সময় দেখি, অনেকে সারাদিন কাজ করছে, দৌড়াদৌড়ি করছে, বেশ “Busy” লাগছে সবসময়! তাই না?
কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায়, তার কিছুই Progress হয়নি।
আসল কথা হলো, শুধু Busy থাকা মানেই Productive হওয়া না।
আসল Productivity হলো সেই কাজটা করা যা আপনাকে আসলে এগিয়ে নিয়ে যায়।
যেমন, ৮ ঘণ্টা বই নিয়ে বসে থাকা মানেই ভালো পড়াশোনা না, যদি আপনি ২ ঘণ্টাও মনোযোগ দিয়ে না পড়েন।
স্মার্টলি কাজ করা আর সঠিক কাজটি করা… এটাই Productivity-এর আসল মন্ত্র।
৫. Critics দের ভয়েস থাকে অলওয়েজ মাইকের মতো, আর সহযোদ্ধাদের সংযত + পরিমিত!
এইটা আমার খুব পছন্দের একটা Lesson। যখন আপনি কোনো কিছু করার চেষ্টা করবেন, দেখবেন একদল মানুষ সবসময় সমালোচনা করবে।
তারা হয়তো আপনার দেয়া বা দেখানো বা পরামর্শ মোতাবেক কোনো কাজই করবে না, কিন্তু আপনাকে Criticism করতে তাদের জুড়ি নেই। এরা কারা জানেন?
এরা হলো সেইসব মানুষ যারা খেলার মাঠে বসে গ্যালারি থেকে শুধু চিৎকার করে, এইভাবে করে নাই ক্যান, ওইভাবে করে নাই ক্যান…এই ভুলটা ক্যান করলো…এইসব! কিন্তু তারা নিজেরা কখনো মাঠে নামে না।
তাই যারা চেষ্টা করে, তাদের ভুল হয়, তারা শেখে, তারা এগোয়।
আর যারা শুধু Criticism করে, তারা পাশেই বসে থাকে। এদের কথা কানে নেবেন না।
৬। একটা ছোট স্টেপ বা জাস্ট ১০ মিনিটের ছোট করে স্টার্ট করাটাই মেইন!
আপনি হয়তো বিশাল কোনো Goal সেট করেছেন। যেমন, মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে ডাক্তার হবেন, বা Engineer হবেন।
এই চিন্তাটা ভালো।
কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটা একবারে ভাবলে পাহাড়ের মতো বিশাল মনে হতে পারে, আর তাতে আপনি হতাশ হয়ে যেতে পারেন।
তাই, যখন কোনো বড় কাজ হাতে নেবেন, তখন পুরো পাহাড়টা একবারে দেখার দরকার নেই।
শুধু পরের Step-টার দিকে মনোযোগ দিন।
আজ কোন অধ্যায়টা পড়বেন? এই সপ্তাহে কী কী শেষ করবেন?
এভাবে ছোট ছোট Step এগোলে দেখবেন, কঠিন Goal টাও সহজ হয়ে যাবে।
৭। Success and failure দুইটা temporary! পার্মানেন্ট না!
জীবন মানেই Success আর Failure-এর এক লম্বা যাত্রা।
আজ আপনি হয়তো একটা পরীক্ষায় খুব ভালো করলেন, কাল হয়তো কোনো একটা Competition-এ হেরে গেলেন।
এটা জীবনের অংশ।
কিন্তু মনে রাখবেন, কোনো Success যেমন চিরস্থায়ী না, তেমনি কোনো Failure-ও আপনাকে চিরদিন আটকে রাখতে পারবে না।
সফল হলে অহংকারী হবেন না, আর ব্যর্থ হলে হতাশায় ডুবে যাবেন না।
দুটোই সাময়িক।
আসল ব্যাপার হলো, প্রতিবারই আপনি কী শিখছেন এবং কীভাবে নিজেকে ইম্প্রুভ করছেন।
৮। Balance কিন্তু end goal না! বা এইটাই সবকিছু না!
সবকিছুতে একটা perfect balance রাখা… এটা শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু বাস্তবে এটা খুব কঠিন।
আপনি হয়তো পড়াশোনায় ভালো করতে চান, আবার খেলাধুলাও করতে চান, বন্ধুদের সাথেও সময় কাটাতে চান, আবার বাবা-মায়ের সাথেও থাকতে চান।
সব কিছুতে একসাথে Perfect Balance রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
দিনের একেক সময় একেকটা জিনিসের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হতে পারে।
Balanceটা আসলে একটা journey, একটা অবস্থা না।
আপনি এমন সব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন যা আপনার জীবনকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলে, ব্যালেন্সের পেছনে অন্ধভাবে ছুটে গিয়ে নিজেকে Exhausted করবেন না।
৯। You can’t control people’s loyalty. আরেকজন আপনার সাথে কেমন বিহ্যাভ করবে বা আপনার কাজকে কিভাবে মুল্যায়ন করবে – সেটা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না!
বন্ধুদের মধ্যে মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটে, তাই না? আপনি হয়তো কারো জন্য অনেক কিছু করেছেন, তাকে বিশ্বাস করেছেন, কিন্তু সে হয়তো আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
এইটা মেনে নেওয়াটা খুব কঠিন।
কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখবেন, আপনি অন্য কারো আনুগত্য (Loyalty) নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। একমাত্র যার Loyalty আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, সে হলো আপনি নিজে—নিজের প্রতি, নিজের মূল্যবোধের প্রতি।
তাই নিজের মূল্যবোধে অটল থাকুন, আর অন্যদের Loyalty নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
১০। নূতন একটা কাজে বা এটেম্পটে রেজাল্ট কি হবে বা কতোটা বাজে হবে – সেটা নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেন না।
নতুন কিছু চেষ্টা করতে কি ভয় লাগে? কারণ, যদি ভালো না করি? যদি অন্যেরা হাসে?
এই ভয়টা আমাদের অনেককে অনেক সুন্দর সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, নতুন কিছু শুরু করার সময় সবারই একটু ‘খারাপ’ বা ‘না-পারার’ একটা পর্যায় থাকে।
সেই পর্যায়টা পার করতে পারলেই আপনি একটা নতুন দুনিয়া এক্সপ্লোর করতে পারবেন।
নতুন ভাষা শেখা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া, সাইক্লিং করা… প্রথম দিকে খারাপ হলেও চেষ্টা করে যান।
Brave enough এমনভাবে হবেন যে, আপনি খারাপ হলেও বা রেজাল্ট খারাপ হলেও অলওয়েজ চেষ্টাটা করবেন!
১১। আরেকজনের ভালো বা খারাপের সাথে কোন কম্পেয়ার করবেন না। নিজের সাথে নিজের কম্পেয়ার করবেন!
এই Lesson টা হয়তো বাকি সব পয়েন্টসগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখি, ক্লাসে কে ফার্স্ট হলো, কে ভালো খেলল, কে নতুন কী মোবাইল কিনতে পারলো… এই Compare করার প্রবণতাটা আমাদের মধ্যে খুবই বেশি।
কিন্তু দিনশেষে আপনার আসল প্রতিযোগিতাটা অন্য কারো সাথে না। আপনার প্রতিযোগিতা আপনার নিজের সাথে।
গতকালের আপনি কেমন ছিলেন, আর আজকের আপনি কতটুকু ভালো?
নিজের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিন।
অন্যের সাথে Compare করতে গেলে শুধু মন খারাপ হবে, নিজেকে ছোট মনে হবে।
নিজের সেরা সংস্করণ হওয়ার চেষ্টা করুন, অন্যের মতো হওয়ার চেষ্টা না করে।
হ্যা শিক্ষণীয় কিছু কথা পাঠ করলাম। ভাল লেগেছে। শভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ।
Very much inspiring brother
ধন্যবাদ।