University জীবনে পা রাখার পর যে শব্দটি আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়, তার নাম—’রিসার্চ পেপার’ বা ‘থিসিস’।
আমাদের সামনে থাকে ৫০টা খোলা ট্যাব, শত শত PDF ফাইল আর একটি জ্বলজ্বলে কার্সরসহ একটি সাদা পাতা। কোথা থেকে শুরু করবো, কীভাবে গুছিয়ে লিখবো—এই ভাবতে ভাবতেই ডেডলাইন চলে আসে। আমি আমার শিক্ষকতার জীবনে এই স্ট্রাগলটা খুব কাছ থেকে দেখেছি।
কিন্তু আমি আজ আপনাদের এমন এক পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, যেখানে রিসার্চ করাটা আর ভয়ের কোনো কারণ নয়, বরং একটি ইন্টারেস্টিং জার্নি। AI টুলস এখন আমাদের জন্য সেই সুপারপাওয়ার নিয়ে এসেছে। এগুলো চিটিং টুল নয়, বরং এগুলো হলো আপনার স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, যা আপনার কঠিন কাজগুলো করে দেবে যাতে আপনি আপনার আসল কাজে—অর্থাৎ ভাবা এবং বিশ্লেষণ করায়—মনোযোগ দিতে পারেন।
চলুন, দেখে নিই এমন কিছু জাদুকরী টুলস যা 2025 সালে আপনার সেরা বন্ধু হতে চলেছে।
১। Scispace ( scispace.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
ভাবুন তো, ২০ পৃষ্ঠার একটি রিসার্চ পেপার না পড়েই আপনি যদি সেটির সাথে কথা বলতে পারতেন? Scispace ঠিক এই কাজটিই করে।
আপনি যেকোনো পেপার আপলোড করে তাকে সহজ ভাষায় প্রশ্ন করতে পারবেন, যেমন: “এই পেপারের মূল ফাইন্ডিং কী?” বা “তারা কোন মেথড ব্যবহার করেছে?”।
এটি আপনার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে দেবে।
২। Litmaps (litmaps.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
একটি ভালো পেপার পড়ার পর আমাদের মনে হয়, “এরকম আরও কিছু পেপার পেলে ভালো হতো”। Litmaps আপনার জন্য সেই কাজটিই করে দেয়।
এটি একটি পেপারের উপর ভিত্তি করে একটি ‘রিসার্চ ম্যাপ’ তৈরি করে, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন কোন পেপার কাকে সাইট করেছে।
এতে করে আপনার ফিল্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলগুলো খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৩। SciSummary (scisummary.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
আপনার হাতে ১০টি পেপার আছে কিন্তু পড়ার সময় আছে মাত্র এক ঘণ্টার। কোনো সমস্যা নেই! SciSummary-তে সবগুলো আপলোড করে দিন, এটি প্রত্যেকটির key points দিয়ে আপনাকে একটি অসাধারণ সামারি বানিয়ে দেবে।
এতে আপনি দ্রুত বুঝতে পারবেন কোন পেপারটি আপনার কাজের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪। Jenni AI (jenni.ai)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
Jenni AI আপনার লেখার পার্টনারের মতো। আপনি একটি লাইন লিখলে, সে আপনাকে পরের লাইনটি লেখার জন্য আইডিয়া দেবে (Autocomplete)।
শুধু তাই নয়, আপনি কোনো তথ্য যোগ করলে সে নিজে থেকেই সঠিক ফরম্যাটে Citation যোগ করে দেবে।
এতে রেফারেন্সিং-এর মতো বিরক্তিকর কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
৫। Paperpal ( paperpal.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
আমরা অনেক সময় ছোটখাটো গ্রামার বা বাক্যগঠনের ভুলে আমাদের লেখার মান কমিয়ে ফেলি। Paperpal বিশেষভাবে একাডেমিক লেখার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে।
এটি শুধু আপনার গ্রামারই ঠিক করে দিবে না, বরং আপনার লেখাকে আরও ফরমাল, প্রাঞ্জল এবং অ্যাকাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী উন্নত করতে সাহায্য করবে।
৬। TextCortex (text.cortex.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা: একই কথা বারবার লিখতে ভালো লাগছে না? বা কোনো জটিল ধারণাকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করতে চান?
TextCortex আপনার লেখাকে বিভিন্নভাবে প্যারাফ্রেজ (paraphrase) করে দেবে।
এতে আপনার লেখায় বৈচিত্র্য আসবে এবং Plagiarism-এর ঝুঁকিও কমবে।
৭। Petal AI ( petal.org)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
আপনার নিজের ডাউনলোড করা ৫০টি PDF-এর মধ্যে কোনটিতে কোন তথ্য আছে, তা মনে রাখা অসম্ভব।
Petal AI আপনার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিয়ানের মতো কাজ করে।
আপনি আপনার সব পেপার এখানে আপলোড করে রাখলে, সেগুলোর ভেতর থেকে যেকোনো তথ্য চ্যাট করে খুঁজে বের করতে পারবেন।
৮। Julius AI ( julius.ai)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
ডেটা অ্যানালাইসিস বা গ্রাফ বানানো অনেকের কাছেই একটি ভয়ের নাম। বিশেষ করে যারা পরিসংখ্যান বা Excel-এ অতটা দক্ষ নন।
Julius AI-এর কাছে আপনি আপনার ডেটা ফাইলটি দিয়ে শুধু সহজ ভাষায় বলে দেবেন আপনি কী চান, যেমন: “এই ডেটা দিয়ে একটি বার চার্ট বানিয়ে দিন”। বাকি কাজটি সে-ই করে দেবে।
৯। Atlas.org ( atlas.org)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
আমাদের মাথায় অনেক আইডিয়া ঘুরপাক খায়, কিন্তু সেগুলো বিক্ষিপ্ত থাকে। Atlas.org আপনার এই আইডিয়াগুলোকে একটি ভিজ্যুয়াল ম্যাপের মতো করে সাজাতে সাহায্য করে।
এতে আপনি আপনার চিন্তাভাবনাগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন এবং সেগুলোর মধ্যে নতুন নতুন কানেকশন খুঁজে পাবেন।
১০। Originality.ai ( originality.ai)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা: বর্তমান যুগে অনিচ্ছাকৃত Plagiarism বা AI-এর লেখা ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক।
এই টুলটি আপনার লেখা চেক করে বলে দেবে, এতে কোনো ধরনের চৌর্যবৃত্তি বা AI-জেনারেটেড কনটেন্টের চিহ্ন আছে কি না।
এটি আপনার অ্যাকাডেমিক সততা রক্ষা করার জন্য একটি সেফটি নেটের মতো।
১১। Speechify (speechify.com)
প্রেক্ষাপট ও সুবিধা:
একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে গেছে? Speechify যেকোনো লেখা বা রিসার্চ পেপারকে মানুষের মতো কণ্ঠে অডিওতে কনভার্ট করে দেয়।
আপনি বাসে বসে, হাঁটার সময় বা জিমে ওয়ার্কআউট করতে করতেও আপনার পেপারগুলো শুনে নিতে পারবেন। A true productivity booster!
